অনলাইন ডেস্ক ::
নিজ দেশে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর গুলি, বাংলাদেশে ঢুকতে মানা। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। নিজ দেশ, ঘরবাড়ি, আপনজন হারিয়ে আসা এসব মানুষের কণ্ঠে এখন শুধুই প্রাণ বাঁচানোর আকুতি। খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নিয়েছেন তারা,বেশিরভাগেরই সঙ্গে নেই জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি। দেখা দিয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট। অনেক শিশুই বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নো-ম্যানস ল্যান্ডে এভাবেই দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন তারা। এখন পর্যন্ত কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবেতর জীবন কাটানো এসব রোহিঙ্গাকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেনি। টেকনাফ সীমান্তের অন্তত ১০টি পয়েন্ট ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। বাংলাট্রিবিউন
গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংস ঘটনার পর দলে দলে রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশের দিকে আসতে শুরু করে।তবে বাংলাদেশের ভেতরে শরণার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রোহিঙ্গা ঠেকাতে অতীতের তুলনায় এবার অত্যন্ত কঠোর বিজিবি।ফলে বাধার মুখে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এখন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে।
উদ্বাস্তু এসব রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাদের বাড়িঘর ওপারে সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরেও তাদের কেউ কেউ প্রাণে বাঁচার তাগিদে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন ফেলে আসা কিছু খাবার কুড়িয়ে আনার আশায়।তবে বাকিদের অবস্থা দুর্বিসহ। স্থানীয় বাংলাদেশি অধিবাসী ও দায়িত্বরত বিজিবি’র সহায়তায় যেটুকু খাবার পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি অবস্থা। খাবার বিতরণ করা হলেও অধিকাংশ রোহিঙ্গাই সেসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অবস্থা এমন যে একজনের খাবার কেড়ে খাচ্ছেন দশ জনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্ত এলাকা বালুখালী, ধামনখালী, রহমতেরবিল, পালংখালী, আন্জুমান পাড়া,টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের উলুবনিয়া, মৌলভী বাজার, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু, জলপাইতলীসহ পুরো সীমান্ত অঞ্চলের নো-ম্যানস ল্যান্ডে প্রায় অর্ধলাখ রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে। এসব রোহিঙ্গার কেউ কেউ রাতের আঁধারে ক্যাম্পে ঢুকে পড়লেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা এখনও রয়ে গেছে সীমান্তে বিজিবি’র পাহারায়। এদের কেউ পলিথিন মোড়ানো তাঁবুর নিচে, কেউ খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। পাঁচ-ছয় দিন ধরে একই জায়গায় অবস্থান করায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে শিশুরা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
উখিয়ার ধামনখালী সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থিত একটি চিংড়ি ঘেরের পাড়ে প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা আছেন এখন। পলিথিনে মোড়ানো একটি তাঁবুর নিচে বাস করছেন রোহিঙ্গা নারী শাহিনা আক্তার। তিনি মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের ঢেঁকিবনিয়া ফকিরপাড়া গ্রামের ফরিদুল আলমের স্ত্রী। শাহিনা বলেন, ‘সেদেশের সেনাবাহিনীর ধাওয়া খেয়েছি। স্বামী নিখোঁজ থাকায় ছোট ছোট তিন সন্তান নিয়ে পালিয়ে আসি ধামনখালী সীমান্তে। তিন দিন ধরে শুধু এক বেলা খেয়ে আছি, তাও বিজিবি’র সহায়তায়। আমার দুই সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’
রমিজা খাতুন (৩০) নামের রোহিঙ্গা নারী জানান, মরিচ পোড়া দিয়ে ভাত জুটেছে এক বেলা।এর কিছুটা তিনি খেয়েছেন বাকিটা পাশে বসা দুই সন্তানকে খাইয়ে দিচ্ছেন। গত দুইদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে থাকতে তিনি নিজেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ির জলপাইতলী নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোজিনা আক্তারের বাড়ি সীমান্তের খুব কাছাকাছি। তিনি জানান, সীমান্তরক্ষী বিজিপি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিনই তার স্বামী আনোয়ার সেলিম খুব অল্প সময়ে চলে আসেন কিছু খাবার নিয়ে। এতেই তাদের স্বস্তি মিলে।
শুধু শাহিনা, রোজিনা ও রমিজা নয়,পুরো সীমান্ত অঞ্চল জুড়েই অনেক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) কক্সবাজার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, গত এক সপ্তাহে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। আইওএম অফিস প্রধান সংযুক্তা সাহানি জানান, রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সহায়তার কথা এড়িয়ে যান তিনি। এসময় সাহানি বলেন, ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধ করা আইওএম’র এখতিয়ারে পড়ে না। আইওএম শুধু অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সহায়তা করে থাকে।
পাঠকের মতামত: